সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তারই প্রশংসা করি এবং তার কাছেই সাহায্য কামনা করি। দুরুদ ও সালাম নাযিল হোক আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর প্রতি এবং সেসব লোকদের প্রতি যারা কেয়ামত পর্যন্ত নবীর পথের অনুসরণ করবে। অতঃপর …, অনেক ভাইয়েরা আমার কাছে আরবি ভাষা শেখার বিষয়ে এবং কিভাবে কুরআন ও সুন্নাহকে সর্বোত্তম উপায়ে বোঝা যায় সে প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে। তাদের প্রশ্নের জবাবে আমি এই ছোট্ট কবিতাটি উল্লেখ করছি। আল্লাহ যেন আমাদের কাজে একনিষ্ঠতা এবং সাফল্য দান করেন। সালাফদের কিছু অংশ একথা বলতেন,

“মান দাখালা ফিল ইলমি জুমলাতান, খারাজা মিনহু জুমলাতান।” অর্থাৎ,

“যে এক নিমিষেই জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করেছে, জ্ঞান এক নিমিষেই তাকে পরিত্যাগ করবে।”

যেকোনো বিষয়ের শিক্ষার্থীর জন্য এটি অপরিহার্য যে সে তার পাঠ্য বিষয়ের বুঝ হাসিল করবে এবং সেটির মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা অর্জন করবে। আরবিতে এটিকে বলা হয়, “তাসাওয়ুর”। পশ্চিমা জগতে আরবি শেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো “তাসাওয়ুর” এর ঘাটতি। যে কেউ বর্তমানে পশ্চিমা বাজারগুলোতে আরবি শেখার অসংখ্য বইগুলো দেখলেই পারেন। এতো বইয়ের ছড়াছড়িতে এটি ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, মুসলিম জগতের সকলেই এতোদিনে আরবি শিখে ফেলার কথা। কিন্তু বাস্তবে এমনটি নয়। এতো কিতাব থাকা সত্ত্বেও আরবি শেখায় ঘাটতি পড়ার প্রধান কারণ হলো “তাসাওয়ুর” এর অভাব যা আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। যাদের আরবি শেখার কোনো ইচ্ছা নেই অথবা শুধু মুখে মুখেই দাবি করে যে তারা আরবি শিখতে চায়, কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো প্রচেষ্টা করেনা, তাদের জন্য আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি যে আল্লাহ তাদেরকে আরবি শেখার তৌফিক দান করুন এবং তাদের অন্তরে কুরআন ও সুন্নাহের ভাষা উপলব্ধি করার ইচ্ছা জাগ্রত করে দিন।

আরবি ভাষা কি?

১. আরবি একটি সেমিটিক (আরব এবং ইহুদী জাতি সম্বন্ধীয়) ভাষা যা মূলত তিন ধাতু-বর্ণবিশিষ্ট শব্দমালা দ্বারা গঠিত। উদাহরণস্বরূপ, আমরা “মাযহাব” শব্দটি উল্লেখ করছি। এই শব্দটি ঝাল-হা-বা ধাতু থেকে এসেছে। এই শব্দটি ঝা’হাবা ধাতু-ক্রিয়াপদ থেকে এসেছে। যারা এই প্রবন্ধটি পড়ছেন, আশা করা যায় যে তারা ইতিমধ্যেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত।

২. আরবি ভাষা নানা শাস্ত্রে পরিপূর্ণ। কেউ যখন আরবি শিখতে শুরু করে তখন তাকে বুঝতে হবে যে, সে কার্যত তিনটি শাস্ত্র শিক্ষা করছে। এই শাস্ত্রগুলোর পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারা আরবি শিক্ষার্থীর ভাষা শেখাকে সহায়ক করে তোলে। এর মাধ্যমে সে জানতে পারে যে কোথায় ভাষাটির শুরু এবং কোথায় এর শেষ। দূর্ভাগ্যক্রমে, বেশিরভাগ আধুনিক আরবি বইগুলো এই তথ্যটুকু তুলে ধরতেও ব্যর্থ। এখন কি বুঝতে পারছেন যে আমি “তাসাওয়ুর” এর ঘাটতি বলতে কি বুঝিয়েছিলাম?

আসলে আরবি ভাষার শাস্ত্রগুলো সংখ্যায় মোট ১২টি। কিন্তু কুরআন এবং সুন্নাহকে উপলব্ধি করার জন্য ৩টি শাস্ত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হলোঃ

এক. নাহু

এটিকে প্রায়সই ‘ব্যাকরণ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। নাহু হলো ভাষা এবং বাক্যে শব্দ ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে আলোচনা। উদাহরণস্বরূপ, আমি এখন তিনটি বাক্য উল্লেখ করবো এবং তাদের মাঝে পার্থক্য তুলে ধরবো। সুতরাং মনযোগ সহকারে লক্ষ্য করুন।

IIRT Arabic Intensive - দুই বছর মেয়াদী অনলাইন ভিত্তিক আরবি ভাষা শিক্ষা প্রোগ্রাম।

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন www.arabic.iirt.info

১. লা তাশরুবিল-লাবান ওয়া তা’কুলু আস-সামাক

২. লা তাশরুবিল-লাবান ওয়া তা’কুলিস-সামাক

৩. লা তাশরুবিল-লাবান ওয়া তা’কুলা আস-সামাক

এ তিনটি বাক্যের মধ্যে পার্থক্য কি? পার্থক্য হলো, বাক্যের শেষে উল্লিখিত ক্রিয়াপদ “তা’কুল” এর মধ্যে যার অর্থ খাওয়া। প্রথম বাক্যে “তা’কুল” শেষ হয়েছে একটি দুম্মাহ দ্বারা। দ্বিতীয় বাক্যে “তা’কুল” শেষ হয়েছে একটি সুকুন দ্বারা। কিন্তু তৃতীয় “তা’কুল” এর শেষ বর্ণ শেষ হয়েছে ফাতহাহ দ্বারা। এই ব্যতিক্রম ঘটেছে ‘ওয়াও’ এর বিভিন্ন প্রয়োগের কারণে। প্রথম বাক্যে ‘ওয়াও’ হলো সেই ‘ওয়াও’ যার দ্বারা ব্যবধান প্রকাশ করা হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, “দুধ পান করোনা কিন্তু তোমার মাছ খাওয়ায় (কোনো সমস্যা নেই)”। দ্বিতীর বাক্যে ‘ওয়াও’ হলো সেই ‘ওয়াও’ যার দ্বারা যুক্ত করা বোঝায়। বাক্যের অর্থ দাঁড়ায়, “দুধ পান করোনা কিংবা মাছ খেয়োনা”। তৃতীয় বাক্যে ‘ওয়াও’ দ্বারা ক্রিয়ার অভিন্নতা বোঝায়। এই বাক্যের অর্থ দাঁড়ায়, “দুধ খেয়োনা এবং একই সাথে মাছও খেয়োনা”। অর্থের এই পরিবর্তন ঘটেছে ‘ওয়াও’ এর বিভিন্ন প্রকার প্রয়োগের কারণে। এই পরিবর্তন শুধুমাত্র শব্দের হরকতের (স্বরবর্ণ) গঠনেই পরিবর্তন আনেনি, বরং বাক্যের অর্থেরও পরিবর্তন ঘটিয়েছে।

দুই. সরফ

এটিকে প্রায়শই ভাষার রূপতত্ত্ব হিসেবে অনুবাদ করা হয়ে থাকে। এর প্রকৃত অর্থ হলো, “ভিন্ন ভিন্ন উদাহরণের ক্ষেত্রে আসল (ধাতু বা মূল) এর পরিবর্তনের মাধ্যমে এমন সব অর্থ বের করা যা অন্যথায় বের করা অসম্ভব ছিলো”। সরফ এর শাস্ত্র মূলত ক্রিয়াপদ এবং ক্রিয়াপদ থেকে উদ্ভুত বিষয় সম্পর্কিত। এই পরিবর্তনটি মূলত অর্থের সম্প্রসারণ এবং মুখের উচ্চারণকে সহজ করার জন্য করা হয়ে থাকে। সরফ এর মাধ্যমে অর্থের পরিবর্তনের বিষয়টির একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে “নাসারা” শব্দটিকে পরিবর্তনের মাধ্যমে। “নাসারা” শব্দটি থেকে আমরা নিম্নোক্ত শব্দগুলো পেতে পারিঃ

নাসারা, নাস’সারা, নাআসারা, তানাসসারা, আনাসসারা, ইসতানসারা, মানসার, নাসির, মুনাসার, মানসুর …

এই সবগুলো শব্দের ক্রিয়ামূল হলো নাসারা। কিভাবে একে মুখে উচ্চারণের ক্ষেত্রে সহজ করা যায় তার একটি উদাহরণ আমি দিচ্ছি। ধরুন আমরা ‘স্কেল’ শব্দটির আরবি বিবেচনা করছি। আরবিতে একে বলা হয় “মিযান”। শব্দটি ক্রিয়ামূল “ওয়াযানা” থেকে উদ্ভুত যার অর্থ পরিমাপ করা। সরফের নীতি অনুযায়ী যে জিনিসটির মাধ্যমে এই কাজটি করা হবে তার উচ্চারণ “মিফ’আল” এর মতো শোনাবে।

আমি যদি এখানে এর (মিফ’আল) প্রয়োগ করি তাহলে পরিমাপের কাজটিকে বলা হবে “মিউযান”। উচ্চারণের জটিলতার দরুণ আমরা ‘ওয়াও’ কে ‘ইয়া’ দ্বারা প্রতিস্থাপন করে দেই যাতে সহজ করার খাতিরে। এই সহজ করার নীতিকেই ‘সরফ’ বলা হয়। সারফের সঠিক প্রয়োগ অনেক সময় ঈমান এবং কুফরির মাঝে পার্থক্য হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, আল্লাহ নিজের সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে বলেন যে তিনি ‘আল মুসাওয়ির’ অর্থাৎ আকৃতি দানকারী। কেউ যদি এখানে ‘ওয়াও’ এর সাথে কাসরাহ এর পরিবর্তে ফাতহাহ মিলিয়ে উচ্চারণ করে তবে এর অর্থ দাঁড়ায় ‘আল-মুসাওয়ার’, অর্থাৎ যাকে আকৃতি প্রদান করা হয়েছে (অন্য কেউ আকৃতি দান করেছে)। একজন অজ্ঞ ব্যক্তিকে যদিও এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে, তথাপি এটি আরবিতে সরফের গুরুত্ব তুলে ধরে।

তিন. বালাগাহ

এটি এমন একটি শাস্ত্র যা আরবি ভাষার রূপ বা অলঙ্কার নিয়ে আলোচনা করে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী যথার্থ অর্থ প্রকাশ করে। শব্দের অর্থ নিয়েও বালাগাহ আলোচনা করে এবং ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের সময় তারা ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। কুরআনের ই’জায (আলৌকিক) প্রকৃতি বোঝার জন্য বালাগাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন থেকে বালাগাহ এর একটি উদাহরণ নেওয়া যেতে পারে। মহান আল্লাহ তা’আলা সুরা আনকাবুত এ বলেন, “আলিফ-লাম-মিম। মানুষ কি মনে করে যে তাকে একথা বললেই ছাড় দেওয়া হবে, “আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি” এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবেনা? অবশ্যই তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করা হয়েছিলো, যাতে আল্লাহ এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করতে পারেন যে কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যুক।” কুরআনের এই মহান আয়াতে পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, “যাতে আল্লাহ এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করতে পারেন যে কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যুক।” আয়াতের এই অংশটিতে আল্লাহ তা’আলা অতীতকাল হিসেবে ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেছেন ‘সাদাকু’। এটি দ্বারা এ বিষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, তারা আগে থেকেই সত্যবাদী ছিল এবং এই পরীক্ষাগুলো শুধুমাত্র তারই সাক্ষ্যীস্বরূপ যা(তাদের মাঝে) পূর্ব থেকেই বিদ্যমান ছিলো অর্থাৎ সত্যবাদীতা। এরপর আল্লাহ বলেন, “এবং একথা সুস্পষ্ট করা যে, কারা মিথ্যুক।” এই অংশে আল্লাহ তাদের বিষয়ে আলোচলা করেন যা মিথ্যুক হওয়ার দরূণ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এখানে তিনি ‘কাযিবিন’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন। বালাগাহ এর শাস্ত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, এই বর্ণনামূলক শব্দ বা সিফাতটি এই গুণের অধিকারী ব্যক্তির সুপ্রতিষ্ঠিত অবস্থা প্রকাশ করে। আল্লাহ ইহুদিদের কথা উল্লেখ করেছেন এবং কিভাবে তারা নবীদেরকে অবিশ্বাস করেছে এবং তাদের কতককে তারা হত্যাও করেছে। সুরা বাকারায় এটিকে অতীতকাল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যখন আয়াতটির প্রতি লক্ষ্য করি, তখন আমরা বালাগাহ এর বিশেষ নিয়ম দেখতে পাই যা ইংরেজি অনুবাদের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ প্রকাশ করে। আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন, “ফা ফারিকান কাযযাবতুম ওয়া ফারিকান তাকতুলুন”: “তাদের কতককে তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলে এবং কতককে হত্যা করেছিলে”। আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন যে, তারা নবীদের একটি দলকে অস্বীকার করেছিলো। তিনি এখানে অতীতকাল হিসেবে ‘কাযযাবতুম’ শব্দটি ব্যবহার করছেন। কিন্তু আয়াতের শেষে আমরা দেখতে পাই যে, যখন তিনি (আল্লাহ) বলেন, তারা (ইহুদিরা) তাদের (নবীদের) কতককে হত্যা করেছে, তিনি (আল্লাহ) বর্তমান কাল হিসেবে ‘তাকতুলুন’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। বালাগাহ এর শাস্ত্র থেকে আমরা জানতে পারি যে, যদি অতীতকালের প্রেক্ষাপটে বর্তমানকাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাহলে এটি “ইসতিমরার” বা ধারাবাহিকতা বোঝায়। সুতরাং বালাগাহ এর প্রেক্ষাপটে এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, ইহুদিরা (পূর্বে)নবীদেরকে অস্বীকার ও হত্যা করতো এবং তারা ধারাবাহিকভাবে নবীদের সত্য পথের অনুসারীদেরকে হত্যা করতে থাকবে। এটি তাফসিরে আল্লুসি এবং তাফসির ইবনে সাউদে উল্লেখ রয়েছে।

আরবি শেখা – কোথা থেকে শুরু করবো?     

এটি আপনার নিজের ওপরে নির্ভর করে। আপনি আপনার আরবি ভাষার জ্ঞান দিয়ে কি করতে চান? একজন বক্সার তার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। একজন দৌড়বিদ দৌড় প্রতিযোগীতায় জয়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। একজন দৌড়বিদ যদি একজন বক্সারের মতো প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তাহলে সে দৌড় প্রতিযোগীতায় জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে পৌছাতে পারবেনা। একইভাবে, একজন বক্সার যদি একজন দৌড়বিদের মতো প্রস্তুতি গ্রহণ করে তাহলে সে তার লড়াইয়ে জেতার মতো শক্তিবল পাবেনা। সুতরাং, এই দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আমি আরবি শিখে কি করতে চাই?”। যদি আপনি শুধুমাত্র পত্রিকা পড়তে চান, তাহলে এই এখানে উল্লিখিত বিষয়গুলো আপনার জন্য খুব বেশি সহায়ক হবেনা। একই কথা বলা যেতে পারে তাদের সম্পর্কে যারা আরবিভাষী কোনো দেশে ডাক্তার বা রসায়নবিদ হতে চান। যদি আপনার আরবি শেখার উদ্দেশ্য হয় আপনার সৃষ্টিকর্তা ও নবী(সাঃ) এর বাণী বোঝার উদ্দেশ্যে, এবং আলেমদের থেকে যে জ্ঞান এসেছে তা বোঝার উদ্দেশ্যে, তাহলে এই উপদেশগুলো ইন শা আল্লাহ আপনার কিছুটা কাজে আসবে।

চিন্তা-ভাবনা করার মতো কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলোঃ

১। আপনাকে আরবি দিয়েই আরবি বুঝতে হবে।

২। নিজে একজন ভাষা অনুবাদকারী হওয়া এর উদ্দেশ্য নয়।

৩। এমন কোনো “একটি বই” নেই যা আপনাকে আরবির সব বিষয় শেখাবে।

৪। বিগত ১৪০০ বছর ধরে আফ্রিকা থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত অনারবরা আরবি ভাষা শিখে আসছে। সুতরাং এটি ধারণা করা ভুল যে, আমরা শিখতে পারবোনা যেমনিভাবে তারা পূর্বে শিখে এসেছে।

৫। আরবি শেখার প্রচলিত পদ্ধতিগুলো পরীক্ষিত এবং সত্য। সুতরাং, নতুন কোনো পদ্ধতিতে ভাষাটি শেখার কোনো প্রয়োজন নেই।

৬। আপনি কেবলমাত্র একটি দিক শিখেই আরবি শিখতে পারবেননা। এর মাধ্যমে আমি যা বোঝাতে চাইছি তা হলো, শুধুমাত্র ব্যকরণ শিখলেই আপনি আরবি শিখতে পারবেননা। আর যদি আপনি শুধু শব্দভান্ডার শিখতে থাকেন, তাহলেও আপনি প্রকৃতপক্ষে আরবি শিখতে পারবেননা। আপনাকে পুরোটাই গ্রহণ করতে হবে।

কোথা থেকে শুরু করতে হবে? 

বাস্তবতা হলো, পশ্চিমা বিশ্বে একজন ভালো শিক্ষক, দৃঢ় সংকল্প, সময়, আরব এবং আরবিভাষী ভাই-বোনদের সংস্পর্শ ছাড়া আরবি শেখা বড়ই মুশকিল। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো, যে কারো উচিত “বিনআ আল-আফ’আল” বইটির “সরফ” এর প্রাথমিক অনুশীলনীগুলো থেকে শুরু করা। প্রাথমিক পর্যায়ে সরফ শেখা অনারবদের জন্য সবচেয়ে উত্তম। প্রকৃতপক্ষে এই পদ্ধতিতেই  তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তানসহ অনারব মুসলিম বিশ্বে আরবি শেখানো হয়ে থাকে। মৌলিক সরফ শেখা, একজন ব্যক্তিকে অভিধানের যথার্থ প্রয়োগ করতে সহায়তা করবে, যাকে সে এই সময়গুলোতে নিত্য সঙ্গী হিসেবে পাবে। (বিঃদ্রঃ আরবি থেকে ইংরেজির সন্দেহাতীতভাবে সর্বোত্তম অভিধান হলো হ্যানস-ওয়ার।) একজন শিক্ষার্থীর উচিত ক্রিয়ার মৌলিক গঠন শেখা এবং অভিধানের প্রয়োগে মৌলিক দক্ষতা অর্জন করা। এরপর সে আরো অনেককিছু শিখতে প্রস্তুত হবে এবং খুব সহজেই শব্দগুলো খুজে বের করতে পারবে।

এরপর শিক্ষার্থীদের উচিত মৌলিক ব্যকরণ শেখা। এক্ষেত্রে, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য “আল-আজরুমিয়াহ” বইটি প্রযোজ্য। এই ছোট বইটিতে ব্যকরণের মৌলিক বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে যা কিনা আরবি শেখার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। কিছু কিছু ভাইয়েরা “আল-আজরুমিয়াহ” বইটি থেকে এমন কিছু বিষয় আয়ত্ত করেছেন যা অনেকক্ষেত্রে আরবির ৩য় বর্ষের কলেজ পড়ুয়া ভাইয়েরাও আয়ত্ত করতে পারননি। যে কারো উচিত একজন ভালো শিক্ষকের সান্নিধ্যে বইটি শেখা যিনি তাকে ব্যকরণের বিস্তারিত বিষয়াদিতে না গিয়ে বইটির মৌলিক বিষয়গুলো শিক্ষা দিবেন। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে শুধুমাত্র ব্যকরণ শেখাই যথেষ্ট নয়, বরং আপনাকে জানতে হবে কিভাবে শব্দ বাছাই করতে হবে যাতে করে আপনার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। এই বিষয়টি অনেক সময়সাপেক্ষ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে। এক্ষেত্রে কিছু বাস্তবিক উপদেশ উল্লেখ করা হলোঃ

১। আপনাকে যথাসম্ভব পড়তে হবে। আরবির অন্যান্য বিষয়ে ছোট ছোট বই পড়তে শুরু করুন। একটি নোটপ্যাডে নতুন নতুন শব্দগুলো লিখে রাখুন। যখনই আপনি অভিধানে কোনো শব্দ খুজেন, তখন পেন্সিল দিয়ে তার নিচে দাগ দিয়ে রাখুন। আপনি যদি পরবর্তীতে শব্দটি আবার খুঁজেন এবং তার নিচে পেন্সিলের দাগ দেওয়া দেখতে পান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেই শব্দটি মুখস্ত করতে হবে। কারণ সম্ভাবনা আছে যে, আপনি আবারো সেই শব্দটি দেখবেন। শব্দগুলোর ইংরেজি অর্থগুলো যে বইটি আপনি পড়ছেন সেখানে লিখে রাখবেন না। কারণ এভাবে আপনি শুধু ইংরেজি অর্থগুলোই পড়বেন প্রকৃত আরবি শব্দগুলো বাদ দিয়ে।

IIRT Arabic Intensive - দুই বছর মেয়াদী অনলাইন ভিত্তিক আরবি ভাষা শিক্ষা প্রোগ্রাম।

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন www.arabic.iirt.info

২। আপনাকে শুনে শুনে শিখতে হবে। এভাবে আপনি জানতে পারবেন যে কিভাবে আরবি বলা হয়ে থাকে এবং নানা চিন্তা-ধারণা ব্যক্ত করা হয়ে থাকে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি শুনে শুনে এমনভাবে কাজ করেন যেন আপনি যা শুনছেন তার সবকিছুই বুঝতে পারছেন। যদি আপনি কোনো বক্তা খুজে না পান, তাহলে কিছু আলেম ও শিক্ষার্থীদের ক্যাসেট কিনতে পারেন। কিছু সুস্পষ্ট বক্তা হলেন, শায়খ মুহাম্মাদ আল উসাইমিন, শায়খ আল আলবানি, শায়খ মুহাম্মাদ আল মুখতার আশ শিনকিতি এবং শায়খ সালিহ আল আশ শায়খ। যাদের বক্তব্য খুব সুস্পষ্ট নয় তাদেরও বক্তব্য শোনা উচিত। এর মাধ্যমে শ্রবণ দক্ষতায় পাণ্ডিত্য অর্জিত হবে। এরকম কিছু বক্তা হলেন, শায়খ আব্দুল আযিয ইবনে বায, শায়খ জিবরিন ও শায়খ ওয়াইজ আল কারনি।

৩। কুরআন শুনুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন।

৪। আরবি দিয়েই আরবি ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। তাদের মতো হবেননা যারা সবকিছু নিজের মাতৃভাষায় অনুবাদ করতে চায়। এটি কিছুটা সময় নিবে, কিন্তু আরবি ভাষা যেমন সেটিকে তেমনিভাবে বোঝার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৫। সেসব আরবদের সাথে যত বেশি সম্ভব কথা বলুন যারা আপনার ভুল শুধরিয়ে দিবে এবং শিখতে সহায়তা করবে।

৬। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সবসময় পড়তে থাকা। আপনি যদি না পড়েন তাহলে কখনোই ভাষার ওপর পাণ্ডিত্য অর্জন করতে পারবেননা। আপনাকে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পড়তে হবে। পড়া আপনাকে দ্বীনের বিভিন্ন শাস্ত্রের আভাস দিবে এবং আপনার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করবে।

৭। প্রাথমিকভাবে আপনার মূল লক্ষ্য রাখুন বোঝার দিকে। আমাদের অনেকেই নিজের ধারণার চেয়ে বেশি শব্দ জানি যা আরবদের সাথে আলাপচারিতা ক্ষেত্রে ব্যবহারের চিন্তাও করিনা। ইংরেজির ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যেতে পারেন।

৮। আরবি শেখার ক্ষেত্রে নিজেকে নিম্নোক্ত উপায়ে যাচাই করুনঃ

১ম স্তরঃ প্রথম তিন মাসে “কিসাস আন-নাবিইন” পড়া এবং বোঝা।

২য় স্তরঃ ২য় তিন মাসে শায়খ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) এর “আল-আকিদা আস-সাহিহা ওয়া মা ইয়ুদাদ্দুহা” পড়া ও বোঝা।

৩য় স্তরঃ পরের তিন মাসে “তাফসির ইবনে কাসির” পড়া ও বোঝা।

৪র্থ স্তরঃ ৪র্থ তিন মাসে ‘ফাতহ আল-মাজিদ, শারহ কিতাব আত-তাওহিদ” পড়া ও বোঝা।

৫ম স্তরঃ ৫ম তিন মাসে ইমাম ইবনে কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) এর “আল ফাওয়াইদ” পড়া ও বোঝা।

৬ষ্ঠ স্তরঃ ৬ষ্ঠ তিন মাসে শায়খ বাকর আবু যাইদ এর “হিলইয়াহ তালিবিল-ইলম” পড়া ও বোঝা। অনেকে উল্লিখিত বইয়ের তালিকার ব্যাপারে দ্বীমত পোষণ করতে পারে, কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে একজন মানুষ ১৮ মাসে এই কিতাবগুলো (কিছু শব্দগুচ্ছ বাদে) বুঝতে পারবে। ইংরেজি বই এবং লেকচার থেকে দূরে থাকুন। এগুলো থেকে বিরত থাকলে আপনার শেখার মনোযোগ বাড়বে।

উচ্চশিক্ষা

আরবিতে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য একজন ব্যক্তিকে নিম্নোক্ত পথে হাঁটতে হবেঃ

১। ব্যকরণঃ “আত-তুহফাহ আস-সানিয়াহ বি শারহিল-মুকাদদিমাতি আল-আজরুমিয়াহ” বইটি দিয়ে শুরু করুন। এটি সম্ভবত আজরুমিয়াহ এর ব্যাখ্যায় শ্রেষ্ঠ বই। এরপরে ইবনে হিশাম এর “শারহ কাতর আন-নাদা” বইটি পড়ুন। এরপরে কেউ ইচ্ছা করলে আলফিয়াহ ইবনে মালিক পড়তে পারে। “জামি দুরুস আল-আরাবিয়াহ” আরেকটি ভালো বই।

২। সরফঃ “বিনা আল-আফআল” বইটি দিয়ে শুরু করুন। এরপরে “আল-মাকসুদ” পড়ুন। আরো উচ্চতর জ্ঞান হাসিলের জন্য ইবনে মালিকের সারফের উপর লিখিত কবিতা, “লামিয়াহ আল-আফ’আল” শিখুন।

৩। বালাগাহঃ “আল-বালাগাহ আল-ওয়াদহিহাহ” বইটি দিয়ে শুরু করুন। এরপরে কেউ চাইলে সুয়ুতি কর্তৃক লিখিত “উকুদ আয-যিমাম” বইটি পড়তে পারেন।

আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের (সাঃ) এর সুন্নাহের পরে ভাষার (আরবি) মজবুতি অর্জনের জন্য সবচেয়ে ভালো বই হলো ইবনে কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইবনে রাজাব আল-হাম্বালি (রাহিমাহুল্লাহ) এর বইসমূহ। আরবি শেখার জন্য যেকোনো একটি বইয়ের ওপরে নির্ভর হয়ে থাকবেন না। মদিনা বুকস আমার মতে যথেষ্ট নয়। এই উপদেশগুলো গ্রহণ করে আল্লাহর কাছে তৌফিক কামনা করুন, অগ্রগতি দেখতে পাবেন ইন শা আল্লাহ।

আর আল্লাহই ভালো জানেন।


উৎস: The golden advice regarding the proper manner of learning the Arabic language

অনুবাদ কপিরাইট © IIRT

মতামত

comments

IIRT Arabic Intensive - দুই বছর মেয়াদী অনলাইন ভিত্তিক আরবি ভাষা শিক্ষা প্রোগ্রাম।

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন www.arabic.iirt.info