কুরআন হল এক মূল্যবান রত্ন আর মণিমুক্তার ভাণ্ডার। যিনি নিরলসভাবে সেগুলোর সন্ধান করেন, তিনি তাঁর আত্মিক বিকাশ ও পুনরুজ্জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় নিয়ামতসমূহ এখান থেকে পেয়ে থাকেন। আর এই নেয়ামতগুলোর মধ্যে রয়েছে: জ্ঞান, অন্তর্দৃষ্টি, বাস্তবতা বনাম বিভ্রমের বোধ লাভ, প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার কারণ উপলব্ধি করা, সেগুলোর প্রতি মানুষের প্রতিক্রিয়ার স্বরুপ বোঝার যোগ্যতা লাভ, নির্দিষ্ট কোনো সময় ও যুগের মানুষের প্রদর্শিত মনোস্তাত্বিক বৈশিষ্ট্যসমুহের ধারণা অর্জন এবং জীবন,মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের ব্যাপারে গভীর পারদর্শীতা অর্জন।

শুধু এটিই নয়, শত শত বছর আগে ঘটে যাওয়া অগণিত বাস্তব ঐতিহাসিক ঘটনাকে মানুষে-মানুষে কথোপকথনের রূপে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, যা কিনা শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলো নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা আবশ্যকীয় করে দিয়েছে। এজন্য তাদের প্রয়োজন পূর্ববর্তী নবীগণ ও তাদের জাতিদের জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা। আর এর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস হল হাদীস সমগ্র।

এছাড়া, এই মহিমান্বিত কিতাব থেকে পাওয়া সর্বোত্তম রত্নগুলোর একটি হল আল্লাহ্‌র সাথে সরাসরি কথোপকথনের অপরিসীম তৃপ্তি ও আনন্দ লাভ। আর এটি হাসিল করার জন্য আল্লাহ্‌র কালাম (كلام) ধীর-স্থির, সুশোভিত ও সতর্কতার সাথে তিলওয়াত করতে হয়। এমন তিলওয়াতের ফলে আল্লাহ্‌র পরম রহমত (رحمة) তিলওয়াতকারীর উপর অবতীর্ণ হয়, যা তাকে আচ্ছাদিত করে রাখে।

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো হল মহিমান্বিত কুরআন নামক ধনভাণ্ডার থেকে পাওয়া নিয়ামত ও রত্নগুলোর মধ্যে সামান্য কিছু।

হ্যাঁ, কুরআন প্রকৃতপক্ষেই এক রত্নভাণ্ডার, শুধুমাত্র তাঁর জন্য যিনি এই ভাণ্ডার থেকে রত্ন হাসিলের চেষ্টা করেন সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে, এবং জ্ঞানের সঠিক উৎস ও শাখা-প্রশাখা থেকে। আর এর অন্তর্গত বিষয়াদির মধ্যে রয়েছে তাজবীদের নিয়মকানুন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়াদি।

কুরআনকে ভালোভাবে বোঝার জন্য একজন শিক্ষার্থী যেসকল বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং একই সাথে সর্বাধিক ভয়ের বিষয়গুলোর একটি হলো আরবি ব্যাকরণ। আরবি ভাষা বুঝতে সহায়তা করার জন্য, অসংখ্য আভিধানিক নিয়মকানুনের সংকলন নিয়ে গঠিত আরবি ব্যাকরণ। এটি বোঝা কখনও কখনও একটি দুর্বোধ্য ব্যাপার হতে পারে। বরং অনেক শিক্ষার্থীর জন্য এ এক অদম্য প্রতিপক্ষ।

আমি এই বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অত্যন্ত পরস্পরবিরোধী কিছু মন্তব্য শুনেছি। এখন হোক সে অভিজ্ঞ কোন শিক্ষক কিংবা কোনো ক্লান্ত-শ্রান্ত শিক্ষার্থী যে কিনা আরবি সর্বনাম, বিশেষ্য ও ক্রিয়া সম্বলিত জটিল বহুমাত্রিক ছকগুলো মুখস্থ করার আন্তরিকতার সাথে প্রচেষ্টার পরও ব্যর্থ হওয়ায় নিজের চুল ছিঁড়তে বসেছে।

কেউ কেউ ধারণা করেন আরবি ব্যাকরণ একজন শিক্ষার্থীর জন্য ভাষাকে আয়ত্ত করা দুঃসাধ্য ও বিভ্রান্তিকর করে তোলে। তাদের মতে, এই ছকগুলো মুখস্ত করে কোনো লাভ হয় না, যদি দিন শেষে শিক্ষার্থীরা কুরআনের মূলপাঠ বোঝার জন্য সেগুলোর মৌলিক জ্ঞান প্রয়োগ করতেই না পারে।

অন্যরা দাবি করেন যে, ব্যাকরণের এই জটিল ছকগুলো মুখস্থ করাই কুরআনের বিষদ অর্থবহুল অথচ সংক্ষিপ্ত শব্দগুলোর অর্থ গভীরভাবে উপলব্ধি করার অন্যতম রহস্য।

নিজে একজন জ্ঞানের চলমান শিক্ষার্থী হিসেবে, আমি দ্বিতীয় মতটি সমর্থন করি। মৌলিক আরবি ব্যাকরণ শিখে আমি অনেক উপকার পেয়েছি। তবে ছকগুলো মুখস্থ করে কেবল পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া কখনোই আমার আসল মাথাব্যাথা ছিলনা, বরং আসল উৎকণ্ঠা ছিল সেই ব্যাকরণের জ্ঞান কুরআনের আরবি পাঠে প্রয়োগ করে কীভাবে তার প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করা যায়। যেটি সরল ভাষার অনুবাদ যথাযথভাবে প্রকাশ করতে পারে না।

IIRT Arabic Intensive - দুই বছর মেয়াদী অনলাইন ভিত্তিক আরবি ভাষা শিক্ষা প্রোগ্রাম।

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন www.arabic.iirt.info

নিম্নে, আমি কুরআনের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া শব্দগুলোর দ্বারা ৩টি উদাহরণ ব্যাখ্যা করে আরবি ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করব।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ آمِنُواْ بِاللّهِ وَرَسُولِهِ

‘‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর এবং তাঁর রসূলের উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর ’’ [সুরাহ আন-নিসা: ১৩৬]

উপরোক্ত আয়াতে দুটি আরবি শব্দ আছে যা শুনতে একে অপরের সাথে অবিশ্বাস্যরূপে সাদৃশ্যপূর্ণ এবং এ শব্দ দুটি বাক্যে পরপর বসেছে। এমনকি শব্দ দুটির  [آمَنُوا এবং  آمِنُواْ] মধ্যে একমাত্র ব্যবধান হলো, ‘‘م’’ এর উপরের ফাতহা (فتحة), কাসরাতে (كسرة) পরিবর্তিত হয়েছে।

آمَنُواْ           آمِنُواْ

শুধুমাত্র ফাতহাকে কাসরাহতে পরিবর্তন করার কারণে একই বর্ণসমষ্টি দ্বারা গঠিত হওয়া সত্ত্বেও অর্থের পরিবর্তন হয়ে গেছে।  “آمَنُواْ” শব্দের অর্থ “সেই লোকেরা যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে” এবং এটি একটি ক্রিয়া বা কাজ করা বোঝাচ্ছে। অপরদিকে “آمِنُواْ” শব্দের অর্থ, “সবাই তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো” এবং এটি কোনো কাজ করা অর্থে ক্রিয়া নয় বরং “একটি আদেশসূচক ক্রিয়া ”, কাউকে কিছু আদেশ করা হচ্ছে বোঝানো হয়। এই আদেশসূচক ক্রিয়া আরবিতে فعل امر  নামে পরিচিত।

কথাটিকে এভাবেও উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যায় যে, আমরা যখন কাউকে কিছু খেতে আদেশ করি তখন তাকে “খাও!” বলি, তবে আমরা কাজ করা অর্থেও ক্রিয়াপদ হিসেবে “খাও” শব্দটি বলি, যেমন: “আমরা ঘণ্টা খানেকের মধ্যে খাবো।’’

আরবি ভাষার সৌন্দর্য হলো, এই ভাষায় একই বর্ণসমষ্টি নিয়ে গঠিত শব্দগুলোর (এক্ষেত্রে বর্ণগুলো ছিল م , ا এবং ن) শুধুমাত্র উচ্চারণের ক্ষেত্রে কার পরিবর্তন করে অর্থের পার্থক্য সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়।

দ্বিতীয় উদাহরণটির জন্য সূরা আল-ইমরানের নিম্নের আয়াতটি দেওয়া হলো:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اصْبِرُواْ وَصَابِرُواْ وَرَابِطُواْ وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

“হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর, একে অপরের সাথে ধৈর্যের প্রতিযোগিতা কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা  সফলকাম হতে পার।’’ [সূরাহ  আল-ইমরান: ২০০]

উপরের আয়াতটিতে আবারও একই ধরণের দুটি সাদৃশ্যপূর্ণ শব্দ পাশাপাশি স্থান পেয়েছে। তারা হলো:

اصْبِرُواْ         صَابِرُواْ

এই ক্ষেত্রে, উভয় শব্দই আদেশসূচক ক্রিয়াপদ, যেখানে একটি গোষ্ঠীকে একটি নির্দিষ্ট কাজের আদেশ দেওয়া হচ্ছে।  এই শব্দ দুটির মধ্যে একমাত্র ভিন্নতা এনেছে আলিফ (ا) হরফটি, যা “اصْبِرُواْ” শব্দে “ص” এর আগে স্থান পেয়েছে, আর “صَابِرُواْ” শব্দে স্থান পেয়েছে “ص” এর পরে।

আপাতদৃষ্টিতে খুব সামান্য একটি হরফের অবস্থানের পার্থক্যের কারণে একই বর্ণসমূহ নিয়ে গঠিত হওয়া সত্ত্বেও শব্দ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থের দুটি আদেশসূচক কাজ বোঝাচ্ছে।

একদিকে “اصْبِرُواْ” ক্রিয়াটির অর্থ “ধৈর্য ধরো (তোমরা সবাই)”; অপরদিকে “صَابِرُواْ”  এর অর্থ “একে অপরকে ধৈর্যের ব্যাপারে উৎসাহিত করো (তোমরা সবাই)”।

এটা কি সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে না যে কুরআনের ভাষা কতটা প্রগাঢ়? শুধুমাত্র একটি বর্ণ,হরফ বা কার যুক্ত করে বা তার অবস্থান পরিবর্তন করে কত সুন্দরভাবে এটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে।

এখন তৃতীয় উদাহরণটিতে আসা যাক। আরবী ব্যাকরণের জ্ঞান কীভাবে কুরআনের আয়াতগুলোকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে তা এই উদাহরণের মাধ্যমে বিষদভাবে বোঝা যাবে:

خُذُوهُ فَغُلُّوهُ

“ধরো একে এবং বেড়ি পড়িয়ে দাও,” [সূরাহ আল-হাক: ৩০]

কুরআনের এই আয়াতটিতে দুটো আদেশসূচক ক্রিয়া রয়েছে যাদের শেষে “هُ” সর্বনামটি যুক্ত আছে। উভয় শব্দ, “خُذُوا” এবং “غُلُّوا” হচ্ছে আদেশসূচক ক্রিয়া যা দ্বারা একাধিক পুংলিঙ্গ বা একদল পুরুষকে বোঝানো হচ্ছে। শব্দ দুটির শেষে উপস্থিত “وا” এটা নির্দেশ করে।

এটি এই আয়াতের ভেতরকার এক দারুণ বিষয়কে ফুটিয়ে তোলে। সাধারণ বাংলা অনুবাদ করলে “خُذُوهُ” এর অর্থ পাওয়া যায় “তাকে ধরে রাখো”, কিন্তু আরবি শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এখানে একজনকে নয়, বরং অনেকজনকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে ‘একজনকে’ ধরে রাখতে।

আখিরাতে অন্যায়কারীদের পরিণামের এক ভয়াবহ এটি দৃশ্য আমাদের সামনে উন্মোচন করে। অগণিত ফেরেশতাকে আল্লাহ সেদিন আদেশ করবেন, একজন পাপীকে ধরে তাকে বেড়ি পরাতে, তারপর তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করতে।

নীচের আয়াতটি  এই ভয়াবহ চিত্রকে পূর্ণতা দান করে;

IIRT Arabic Intensive - দুই বছর মেয়াদী অনলাইন ভিত্তিক আরবি ভাষা শিক্ষা প্রোগ্রাম।

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন www.arabic.iirt.info

ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ

“অতঃপর তাকে নিক্ষেপ কর জাহান্নামে।’’ [সূরাহ আল-হাক: ৩১]

এই আয়াতে আরেকটি আদেশসূচক ক্রিয়া “صَلُّوا” উপস্থিত, যার শেষে “هُ” সর্বনামটি যুক্ত আছে। অর্থটি আগের মতই; একাধিক ফেরেশতাকে আল্লাহ্‌ আদেশ দিবেন “هُ” দ্বারা নির্দেশিত ব্যক্তিটিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে।

ثُمَّ فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوهُ

“অতঃপর তাকে শৃঙ্খলিত কর সত্তর গজ দীর্ঘ এক শিকলে।’’ [সূরাহ আল-হাক: ৩২]

সর্বশেষে, “اسْلُكُوهُ” আদেশসূচক ক্রিয়ার দ্বারা বোঝায় যে, আল্লাহ্‌ একাধিক ফেরেশতাকে আদেশ করবেন সেই ব্যক্তিটিকে এমন এক শিকলে আবদ্ধ করতে যাতে আবদ্ধ রয়েছে তার মত অন্যান্য পাপীরাও।

তাফসীর ইবনে কাসীরে উপরোক্ত আয়াতটি নিম্নোক্তভাবে ব্যাখ্যা করা আছে:

আল্লাহর বাণী, “তাকে ধরো এবং তাকে আটকাও; অতঃপর তাকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করো।” এর অর্থ হলো, আল্লাহ্‌ জাহান্নামের রক্ষকদের আদেশ দিবেন যে তাকে (পাপীকে) সবার সমাগম থেকে জোর করে সরিয়ে নিতে, তারপর তার গলায় লোহার বেড়ি পরাতে – অতঃপর তাকে জাহান্নামে দিকে তুলে নিয়ে নিক্ষেপ করতে, অর্থাৎ তাকে জাহান্নামে নিমজ্জিত করা হবে।

“তারপর তাকে ৭০ হাত শিকলে আবদ্ধ করো।” কা’ব আল-আহবার (রহঃ) বলেছেন, “এই শিকলের প্রতিটি আংটা হবে এই পৃথিবীতে পাওয়া সমগ্র লোহার সমপরিমাণ।’’

আল-‘আওফি (রহঃ) বর্ণনা করেন যে ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং ইবনে জুরায়েজ (রহঃ) দুজনেই বলেছেন, “প্রতি বিঘতের মাপ হবে একজন ফেরেশতার হাতের দৈর্ঘ্যের সমান।”

ইবনে জুরায়েজ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, فَاْسْلُكُوهُ (তারপর তাকে বাঁধো) এর মানে হল: “এই শৃঙ্খল তার পায়ুপথে প্রবেশ করিয়ে তার মুখ দিয়ে টেনে বের করা হবে। তারপর তাদেরকে এমনভাবে এই শিকলে সাজানো হবে যেভাবে পঙ্গপালকে পোড়ানোর জন্য কাঠিতে সাজানো হয়।’’

আল-‘আওফি (রহঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে আরও বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, “এই শৃঙ্খল তার পেছন দিয়ে প্রবেশ করিয়ে তার নাকের ছিদ্র দিয়ে বের করা হবে, ফলে সে আর তার দুই পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারবে না।’’

তাফসীর ইবনে কাসীরের উদ্ধৃতি এখানে শেষ করা হলো।

কুরআন তিলাওয়াত বা শুধু এর আরবি লাইনগুলো পাঠ করার সময় কোনো প্রকার অনুবাদ বা তাফসীরের সহায়তা না নিয়েও, আমরা কিছু বিষয় বুঝতে পারি। আর তা ব্যাকরণ জানার কারণে।

উপরোক্ত উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে, তাফসীরে এটা স্পষ্টভাবে বলা আছেঃ  জাহান্নামের পরিচালনার ভূমিকায় নিয়োজিত বহুসংখ্যক ফেরেশতা প্রতিটি জাহান্নামীকে ধরে নিয়ে আসবে এবং তাদেরকে হয় (i) জাহান্নামের দিকে ধাবিত অন্যান্য পাপীদের সাথে একটি শৃঙ্খলে বাঁধবে; নয়তো (ii) একটি অত্যন্ত বিশাল লোহার শৃঙ্খল তার শরীরের মধ্য দিয়ে শূলের মত প্রবেশ করাবে। এভাবে একজন পাপীর সাথে এসব কঠোর ফেরেশতাদের করা আচরণের এই ভয়ঙ্কর চিত্রটি, যে কারো শরীরের সকল পশম খাড়া করিয়ে দেয়।

আমরা আল্লাহর কাছে আখিরাতের এই ভয়াবহ আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমীন।।

আমি আশা করছি যে, আমি যথাযথভাবে সকলের কাছে এই ব্যাপারটি উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি যে, আরবি ব্যাকরণ শেখার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী সর্বদা অনুবাদের সহায়তা না নিয়েও কুরআনের অনেক আয়াত ও শব্দের আভিধানিক অর্থ ও পরিভাষা বুঝতে পারবে।

আমি জানি যে আরবি ব্যাকরণ অধ্যয়ন করা মাঝে মধ্যে একটি  দুরূহ কাজ মনে হতে পারে। নিম্নে এই ব্যাপারে সহায়ক কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো-

০১। প্রতিনিয়ত এই নিয়তকে নবায়ন করা যে আমরা কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ইসলামী জ্ঞানের এই শাখাকে অধ্যয়ন করছি। কারণ এই জ্ঞান আমাদের তাঁর মহিমান্বিত কিতাবকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করবে, যার দ্বারা আমরা তাঁর ঘনিষ্ঠতা এবং আরও তাকওয়া অর্জনে সক্ষম হব, ইনশা’ আল্লাহ্‌।

০২। প্রথম প্রথম ব্যাকরণের জটিল ছক ও কঠিন বর্ণনামূলক শর্তাদি দেখে বিচলিত না হয়ে, বরং এসব নিয়মকানুনের জ্ঞানকে কুরআনের আয়াতে প্রয়োগ করার চেষ্টা করে যেতে হবে।

০৩। কেবলমাত্র পরীক্ষায় পাস করার উদ্দেশ্যে এত সব ব্যাকরণের মূলনীতি, তাদের নাম এবং তাদের জটিল সংজ্ঞাসমূহ মুখস্থ করার ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়া উচিত নয়। বরং এতেও কোনো সমস্যা হবে না যদি কেউ, উদাহরণস্বরূপ فعل امر এর জটিল সংজ্ঞাটি ভুলে যায়, কিন্তু কুরআন পড়ার সময় সে ঠিকই এই বিষয়টি চিহ্নিত করতে পারে এবং কীভাবে তা ঐ আয়াতের অর্থের সাথে যুক্ত হয়েছে তা বুঝতে পারে।

০৪। সর্বদা এই জ্ঞান অন্বেষণকে মহৎ পুরষ্কারযোগ্য একটি পবিত্র কাজ হিসেবে বিবেচনা করা।

শিক্ষকদের অধীনে করা বিধিবদ্ধ কোর্স এবং শ্রেণীকক্ষের পাঠ্য এর বাইরেও যখন কেউ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কখনো হার না মানার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাবে, তখন আল্লাহ্‌র সাহায্য তার উপর বরকত হয়ে আসবে। তখন তার জন্য এই কাজটি সহজ মনে হবে। এই বরকত তাকে কুরআনের ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে এমন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবেন যা সে উপলব্ধি করার কথা কল্পনাও করতে পারেনি, ইনশা’ আল্লাহ্‌।


উৎস: Using Arabic Grammar to Understand the Qur’an

অনুবাদ কপিরাইট © IIRT

মতামত

comments

IIRT Arabic Intensive - দুই বছর মেয়াদী অনলাইন ভিত্তিক আরবি ভাষা শিক্ষা প্রোগ্রাম।

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন www.arabic.iirt.info